পৃথিবীতে সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা। টানাপোড়েনের সংসারে সেই মা-ই তার ছয় বছর বয়সী সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রির জন্য নিয়ে গেলেন হাটে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পাকুজ্জাছড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। অভাবের সংসারে ছেলেকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি মা সোনালী চাকমার।

স্থানীয়রা জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রামকৃষ্ণ চাকমা। ছোট ছেলেকে নিয়ে পৈতৃক বাড়িতে গোয়াল ঘরের পাশে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে কয়েকে বছর ধরে থাকছেন সোনালী চাকমা। তার স্বামীও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। বড় দুই ছেলে মা ও ছোট ভাইয়ের খবর না নেওয়ায় অভাব-অনটনে তাদের দিন কাটছে।একপর্যায়ে অভাব-অনটন সহ্য করতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির সাপ্তাহিক বাজারে ছেলে রামকৃষ্ণকে বিক্রি করতে যান মা সোনালি চাকমা। ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করার প্রস্তাবে দর কষাকষির সময় সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমার উপস্থিতে রক্ষা হয় রামকৃষ্ণ’র। পরে সুনীল জীবন চাকমা মা-ছেলেকে পরিবারের জিম্মায় তুলে দেওয়ার পর বিষয়টি জানান ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে। 

ভাইবোন ছড়া ইউনিনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুজন চাকমা জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মা ও ছেলের পাশে দাড়াঁনোর পাশাপাশি শিশুটিকে একটি শিশু সদনে থাকার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করছেন।

এদিকে অভাব-অনটনের সংসারে ছেলেকে ঠিকমতো থাকার ও ভরণপোষণ দিতে না পারায় ছেলেকে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন মা সোনালি চাকমা।

স্বজনরা বলছেন, মৃগীসহ অন্যান্য রোগের প্রভাবে সোনালী চাকমা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এজন্য মাঝে মাঝে এলোমেলো কথা ও কাজ করেন।

এদিকে, সন্তানকে বিক্রির খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সোনালি চাকমার বাসায় যায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। তিনি জানান, পরিবারটির জন্য ৬ মাসের খাদ্যশস্য ও নগদ কিছু অর্থ দিয়েছেন। এছাড়া সদর ইউএনও’কে বলে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের জানান, মৃগী রোগীদের মানসিক সমস্যাও হতে পারে। জেলা সদর হাসপাতালে এই রোগের ভালো ও বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। সোনালি চাকমা চাইলে তাকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।