লাশের মুখ দেখতে দেওয়া হয়নি কোনো পরিবারকেই। করোনা সংক্রমণ প্রাণ কেড়েছে আপনজনের। শোকের পাহাড় ডিঙিয়ে লাশ শনাক্ত করার কথা মনেও আসেনি। বিপত্তির শুরুটা এখান থেকেই। শেষবার প্রিয়জনের মুখ দেখতে গিয়েই ধাক্কাটা লাগে। এ কার দেহ! প্লাস্টিকে মুড়িয়ে যে দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে সে তো অন্য কারও। তার ধর্মও ভিন্ন। দেহ অদল-বদলের এমনই সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে ভারতের দিল্লিতে। কাঠগড়ায় এইমস হাসপাতাল।
দুই পরিবারেরই যখন সম্বিত ফেরে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মুসলিম পরিবারের মেয়েকে দাহ করা হয়েছে শ্মশানে। হিন্দু বাড়ির মেয়ের দেহ চলে এসেছে কবরে।
ঘটনা গত ৭ জুনের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিল্লির এইমস হাসপাতালে মৃত্যু হয় দুই নারীর। একজন হিন্দু ও অন্যজন মুসলিম। পরদিন সকালে দুই পরিবারকেই লাশ নিতে ডাকা হয়।
মুসলিম পরিবার জানিয়েছে, সকাল ৮টা নাগাদ মর্গ থেকে মৃতদেহ প্লাস্টিকে জড়িয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মুখ দেখা যায়নি। শেষকৃত্যের আগে মুখ দেখার কথা মাথাতেও আসেনি তাদের। সাতজন গিয়েছিলেন দেহ নিতে। কয়েকজন ছিলেন এইমসের ট্রমা সেন্টারে, বাকিরা দিল্লি গেটের কাছে কবরস্থানে। সেখানে সব রীতি রেওয়াজের পরে মৃত নারীর তিন সন্তান তাদের মায়ের মুখ শেষবারের মতো দেখতে চায়। চরম ধাক্কাটা আসে তখনই।
মৃতের ভাই বলেছেন, দিল্লি গেটের ওই কবরস্থানে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা তাদের মৃতদেহের মুখ দেখতে দিচ্ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিল, প্লাস্টিক ও অন্যান্য সুরক্ষার আবরণ সরিয়ে মুখ দেখতে গেলে ৫০০ টাকা দিতে হবে। শেষে তার শর্তে রাজি হয়ে লাশের মুখ দেখেই চমকে ওঠেন সকলে। প্লাস্টিকে মোড়া দেহ তো তাদের আপনজনের নয়। অন্য এক নারীর দেহ যিনিও একই সময় এইমসে ভর্তি হয়েছিলেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। তার থেকেও যে চিন্তার শিহরণ খেলে যায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সেটা হল, এই মহিলার ধর্মও তো আলাদা। যদি দেহ বদলে যায়, তাহলে তাদের পরিবারের মানুষের শেষকৃত্য কোথায় হচ্ছে?
ভয় এবং আশঙ্কার যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল সকলের মনে সেটাই সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। মৃতার ভাই জানিয়েছেন, যতক্ষণে তারা হাসপাতালে পৌঁছে পুরো ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের পরিবারের মানুষের শেষকৃত্য হয়ে গেছে পাঞ্জাবি বাগ শ্মশানে। ওই হিন্দু পরিবারও জানত না যে দেহ বদলে গেছে। যাকে দাহ করা হয়েছে তিনি অন্য মানুষ। আর তাদের পরিবারের মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কবরস্থানে।
দুই পরিবারের মধ্যে এই ঘটনার কী প্রভাব পড়েছিল বা মীমাংসা কীভাবে হয়েছিল সেটা অবশ্য জানা যায়নি। তবে এইমস ট্রমা কেয়ার সেন্টার জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মর্গের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্র- দ্য ওয়াল।