অনলাইন ডেস্ক :

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে প্রাণ হারানো মানুষদের বেশিরভাগই সিনিয়র সিটিজেন। তাই আমাদের দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদরা। নিজ বাসায় নামাজ পড়ে, বই-পত্রিকা ও সংবাদ দেখে সময় পার করছেন তারা। কেউ আবার লেখালেখি, আবার কেউ কেউ প্রযুক্তির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।   

প্রবীণ রাজনীতিবিদরা জানিয়েছেন, জীবনে অনেক কঠিন সময় এসেছে। তবে আগে কখনও এরকম পরিস্থিতি দেখেননি, যেখানে মানুষ-মানুষ সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেন না। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এই ভাইরাস অত্যন্ত মারাত্মক। ফলে বাধ্য হয়ে নিজ থেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘পাবনা আছি। গত মাসে এসেছি। আর ঢাকায় যাইনি। এখানে এক রকম গৃহবন্দি অবস্থায় আছি। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটছে। গ্রামে তো পত্রিকা আসে না। আমার নাতি মোবাইলে কিছু কিছু খবর দেখায়। এভাবে কেটে যাচ্ছে সময়।’

বাড়ির বাইরে যান না বলে উল্লেখ করে ৯২ বছর বয়সী মাওলানা ইসহাক বলেন, ‘ঘরেই নামাজ পড়ি। কারণ দুযোর্গের সময় আপনাকে নিজের মেধা খরচ করে চলতে হবে। সৌদি আরবে তো মসজিদ বন্ধ আছে। তারা আজানের আহ্বান পরিবর্তন করে حي على الصلاة (হাইয়া লাল-সালাহ) এর পরিবর্তে صلوا في بيوتكم (আল-সালাতু ফি বুয়ুতিকুম) করেছে; অর্থাৎ তোমরা মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ আদায় করে নাও। এই সময়ে ঘরে নামাজ পড়লে কোনও ক্ষতি নেই।’

বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বয়স ৮৭ বছর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমত বাসা থেকে একদমই বের হই না। কারণ বয়স অনেক বেশি। এই বয়সটা করোনাভাইরাসের জন্য বসচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সময় কাটে লেখালিখি করে, বই ও নামাজ পড়ে। বাড়িতে এখন আমার বড় মেয়ে আছে, তার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে গল্প করেও কিছুটা সময় চলে যায়। এছাড়া নিজের বাড়িতে বেশকিছু সবজি গাছ লাগিয়েছি। সেগুলোও দেখভাল করি।’      

তিনি আরও বলেন, ‘টেলিফোনে আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতাকর্মীদেরও খোঁজ-খবর নেই। এইভাবে সময় কেটে যাচ্ছে।’ 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ডা. কামাল হোসেনের বয়স ৮২ বছর। কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে তো বের হতে পারি না। এই কারণে একটা অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে আছি। বই, পত্রিকা পড়ছি। টেলিভিশন দেখছি। যেখান থেকে পারছি খবর সংগ্রহ করছি। এভাবে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তবে আরও কতদিন এভাবে চলবে জানি না। জীবনে অনেক খারাপ সময় এসেছে। দেশের স্বাধীনতার সময় জেলে ছিলাম। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি ছিল না।’  

কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘ভাগ্য ভালো যে মোবাইল ফোন আছে। এই কারণে কিছুটা হলেও সময় ভালো কাটছে। কারণ সবাই টেলিফোন করছে, আমি নিজেও টেলিফোন করছি। খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বাসায় আছি। তবে নিজ এলাকার সব সময় খোঁজ-খবর নিতে হচ্ছে। আমার এলাকায় তো ২০টির মতো ইউনিয়ন। সেখানকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নিয়মিত ফোন করে খোঁজ নিতে হচ্ছে। মানুষের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা জানতে হচ্ছে। যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে, তা পাঠাতে হচ্ছে।’

৭৮ বছর বয়সের এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘এছাড়া বই, পত্রিকা ও নামাজ পড়ে এবং নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কেটে যাচ্ছে।’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খুবই বোরিং সময় কাটছে। খুবই হতাশার মধ্যে সময় কাটছে। তবে আমার তো ১৪তম বই লেখা প্রায় শেষ। এখন সেটাকে আপডেট করছি। দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। হতাশা থেকে বাঁচার জন্য এখন এই কাজটা করছি। যদিও কাজটা অনেক কঠিন, কারণ এটার জন্য অনেক গবেষণা করতে হচ্ছে।’

৮০ বছর বয়সের এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘এর বাইরে বাসা থেকেই টেলিফোনে এলাকার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

‘সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন