মাদক মামলায় অবশেষে জামিন পেয়েছেন বাংলাদেশের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি।

র‍্যাবের একটি অভিযানে মাদকসহ আটক করে পরীমনিকে একাধিকবার রিমাণ্ডে নেয়া এবং বারবার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন শুনানির নির্ধারিত সময় তের দিন এগিয়ে এনে পরীমনিকে জামিন দিলেন ঢাকার মহানগর ও দায়রা জজ আদালত।

মঙ্গলবার জামিন আবেদনের শুনানির পর মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ জামিন আদেশ দেন।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্র না হওয়া পর্যন্ত পরীমনিকে জামিন দেয়া হয়েছে।

বিবিসিকে মি. পাল বলেন, পরীমনির এখন আর মুক্তি পেতে আইনগত কোন বাধা নেই

পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ”মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৭ ধারা অনুযায়ী মহিলা একটি প্রিভেলেজ পাবেন। যেহেতু পরীমনি একজন মহিলা, তার দেশে বিদেশে তার পরিচিতি আছে, তার কিছু সিনেমা প্রক্রিয়াধীন আছে, সেগুলোর শিডিউল বিনষ্ট হচ্ছে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।” তিনি বলছেন, আমরা চেষ্টা করবো আজকেই তাকে যেন জেল হাজত থেকে মুক্ত করা যায়।

নিয়ম অনুযায়ী, পরীমনি যে কারাগারে রয়েছেন, সেই কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে জামিনের আদেশটি পৌঁছলে পরীমনি সেখান থেকে বের হতে পারবেন।

এর আগে এই মামলায় জামিন আবেদন করা হলে শুনানির জন্য একুশ দিন পর তেরই সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ।

তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন পরীমনি। তখন এই মামলায় কেন অবিলম্বে জামিন শুনানি হবে না, তা জানতে হাইকোর্ট রুল জারি করলে শুনানির তারিখ ১৩ দিন এগিয়ে আনা হয়।

২৬ দিন পরে জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি
২৬ দিন পরে জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি

বনানীর বাসা থেকে চৌঠা অগাস্ট পরীমনিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

তার বাসা থেকে ‘মদ, আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধার করার কথা জানিয়ে পরদিন মাদক আইনে মামলা হয়।

সেই মামলায় তিন দফা রিমান্ড নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।

গত ২২শে অগাস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত জামিন শুনানির জন্য ২১ দিন পর ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন।

পরদিন আরেকটি আবেদনে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হলেও, তাতে আদালতের সাড়া মেলেনি।

ফলে ২৫শে অগাস্ট হাইকোর্টে আবেদন করে রুল চাওয়া হয়। পাশাপাশি পরীমনির জামিনের আবেদনও করা হয়।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ২৬শে অগাস্ট সরাসরি জামিনের আদেশ না দিয়ে রুল জারি করেন।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে ২১দিন পর জামিন শুনানির যে আদেশ দিয়েছেন জজ আদালত, সেটা কেন বাতিল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

পহেলা সেপ্টেম্বর রুল শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে মহানগর দায়রা জজকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তবে তার আগেই জামিন আবেদনের শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।

তবে মাদক মামলায় একজন চিত্রনায়িকাকে তিন দফা রিমান্ডে এবং জামিন না দেয়ায় সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঢাকায় তার মুক্তি চেয়ে মানববন্ধনও হয়েছে। পরীমনির মুক্তি দাবী করে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন দেশের কবি, লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীরাও।

গত ৪ঠা অগাস্ট পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে ওই বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের দাবি করে র‍্যাব।

ওইদিন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওই বাসায় অভিযানের পরদিন র‍্যাব এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলো যে, পরীমনি আগে থেকেই অ্যালকোহলে আসক্ত এবং তার বাসা থেকে ১২০টি আগের ব্যবহার করা খালি বোতল ও ১৯টি বিদেশি মদের বোতল তারা উদ্ধার করেছে।

অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ মদ ছাড়াও এলএসডি ও আইসের মতো মাদক উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‍্যাব দাবি করে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন পরীমনি।
সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন পরীমনি।

র‍্যাব আটক করলেও এই মামলার তদন্তভার প্রথমে পায় ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে তদন্তভার যায় অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডিতে।

৫ই অগাস্ট আদালতে উপস্থাপনের পর তাকে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় এই অভিনেত্রীকে। পরবর্তীতে আরও দুই দফায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়।

এর আগে জুন মাসে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিলেন পরীমনি।

তিনি প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ‘ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার’ অভিযোগ তুলে বেশ সাড়া ফেলে দেন। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিকার চেয়ে তিনি বনানী থানায় গিয়ে কোন সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে বিচার চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য কামনা করেন।

এ ঘটনার জের ধরে মামলা হয় এবং ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদকে আটক করা হয়, যিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।

গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এই অভিনেত্রী।

২০২০ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তিনি।