কবি রশিদ হারুন
মহামান্য আদালত কবিকে যখন দোষী ঘোষনা করলো,
কবি তখন বুকের মাঝে অট্টহাসি হেসেছে নীরবে।
কবির কবিতারা নাকি
-এখন মিছিলে যায় স্লোগানে স্লোগানে।

জনগন তাদের দাবী-দাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে,
সবাই নাকি আরাম প্রিয় হয়ে গেছে।
শুধু কবির কবিতাগুলো চরম বিপ্লবী হয়ে গেছে।
একটুও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না রাষ্ট্রযন্ত্রকে
-শ্রেনীশত্রু খতম করছে কবিতার অভিমানে,
তাই কবিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো।

কবির মৃত্যুদন্ড হলো
-আর কবিতা লিখতে না দেওয়া,
কবির সকল কিছু এখন
রাষ্ট্র্রের অধিকারে চলে যাবে।
কবিতার খাতা,কলম,বসত ভিটা,
একটা ছোট্ট পুকুর আর তার পাশে দাড়ানো
লিকলিকে উদাসী নারিকেল গাছ।

তারপরও মহামান্য আদালত
-কবিকে উলঙ্গ করে দেখতে বললো,
কবিতা লেখার মতো আর কিছু
লুকিয়ে রাখেনিতো শরীরের গোপন জায়গায়?

সাথে সাথে মহামান্য আদালতের আদেশ পালনের জন্য
একজন সিপাহী তার হাতের বড় বড় নোঁখ দিয়ে
-কবির শরীরের প্রতিটি লোমকুপ আচঁড় দিয়ে দেখলো,
-বড় বড় দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে দেখলো।

কিছু না পেয়ে বললো,
“একটা বুকের খাঁচা ছাড়া
শরীরে আর কিছুই নেই”।
সিপাহী জানেনা এই বুকের খাঁচায়ই লুকিয়ে রেখেছে কবি
-একটা আকাশ,নদী,পাহাড়,
-মায়ের আদর, বাবার শাসন,
-কিছু অভিমান ,বিরহ ,ভালোবাসা,
-একাকীত্ব, সব কিছু -একেবারে সব।

মহামান্য আদালত তার রায়ে আরো বললো,
“কবির মৃত্যুর পর
-তার কোনো কবর হবেনা এই রাষ্ট্রে”।

কবি এবার অট্টহাসি দিয়ে চিৎকার করে বললো,
“কবিদের মৃত্যু হয়না,
কবরের জন্য মাটি দরকার হয়না,
কবির কবর হবে
-প্রতিটি কবির বুকের জমিনে।”

কবি হাসতে হাসতে আরো বললো
“কবি জানাজার কাপড় বুনবে
-তার কবিতার শুদ্ধ অভিমানের সুতোয়,
কবির জানাজা হবে
-কবিতার বিরহের আর অভিমানের
স্লোগানে স্লোগানে”
—————-
কাব্যগ্রন্থ- সময় ভেসে যায় বৃষ্টির জলে
রশিদ হারুন
২৭/০১/২০১৮