শিরোনাম দেখে যদি আপনি বিস্মিত হোন তাহলে ভালোবাসার জন্য বিশেষ দিবসের প্রয়োজন এ দেখে-ও আপনি সমান্তরালে বিস্মিত এবং শঙ্কিত হওয়ার কথা! লিখতে বসে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম ভালোবাসা দিবস-কে কোনো ইতিবাচকতার সুতোয় গাঁথা যায় কি-না। এ-ও ভাবলাম সবকিছুর-ই তো কমবেশি দিবস আছে তাহলে থাকুক না ভালোবাসার-ও আলাদা একটি দিবস। কিন্ত রবি ঠাকুর আমাকে ভালোবাসার দিবসে আটকাতে দিলেন না! অবশ্য সরাসরি কোন লেখার মাধ্যমে কবিগুরু ভালোবাসা দিবসের বিষয়ে আপত্তি করেছেন এমনটা আমার স্মৃতিতে নেই কিন্তু সম্প্রতি রবি ঠাকুরের পড়া “গোরা” উপন্যাসের একটা লাইন আমাকে বেশ আকর্ষিত করলো। লাইনটা অবশ্য তিনি সরাসরি বলেননি বলিয়েছেন উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র হারানবাবুকে দিয়ে, হারানবাবু কহিলেন “ অধিকার না থাকলে আমি যে শুধু চুপ করে থাকতুম তা নয়, চিন্তা-ও করতুম না, সমাজকে তোমরা গ্রাহ্য না করতে পারো কিন্তু যতদিন সমাজ আছে ততদিন সমাজ তোমাদের বিচার করতে বাধ্য”।
আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ একই সাথে রসিক এবং লেখক হিসেবে রহস্যময়! রবি বাবু প্রায় লেখায়-ই সমাপ্তি না টেনে তা পাঠকদের হাতে ছেড়ে দেন। এতে রস, রসবোধ এবং সমাপ্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মায় পাঠকদের; ফলে গ্রন্থিমোচন-ও পাঠকরা নিজেদের মতো করে করেন।
আমার জ্ঞানের ক্ষুদ্রতা, জানার সীমাবদ্ধতা এবং চিন্তার/গবেষনার সংকুলতা থাকা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে মনে হয় কিছু জায়গায় রবীন্দ্রনাথের মতো শক্তিমান লেখক-ও সমাজ নামক সত্যেকে উপেক্ষা করতে পারেননি। হয় তিনি সমাজ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন নয়তো সিদ্ধান্ত পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথকে বিশ্লেষন করা আমার লক্ষ্য নয়। রবীন্দ্রনাথ-কে ব্যাখ্যা করার মতো নূন্যতম যোগ্যতা-ও আমার নেই। তবু-ও আমার লেখায় রবীন্দ্রনাথ-কে টেনে আনলাম মূলত “সমাজ” নামক প্রবঞ্চের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। এমনিতে-ই বর্তমান সময়ের লোকজন সমাজ সম্পর্কে সচেতন তবু-ও রবিন্দ্রনাথ-কে দিয়ে সমাজ সম্পর্কে আরেকটু স্পষ্ঠ ধারণা দেওয়ার ফলে মানুষের সমাজ সম্পর্কে অনুধাবনের কৌতুহল বাড়বে বলে আমার ধারণা।

লেখার মূলে ফিরে যাই , ১৪-ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান সময়ের মৌসুমী “ভালোবাসা দিবস”। শব্দটা শুনতে খারাপ নয়, কারো কারো কাছে হয়তো শব্দের উচ্চারণে আনন্দ অনুভবের উচ্ছ্বাস প্রতিফলিত হয়। কিন্তু আমি খুঁজতে চাচ্ছি ভালোবাসা দিবসের সাথে বাঙালি সমাজের সম্পর্ক। বলে রাখা দরকার আমি সমাজ বুঝি ধর্ম সহ। ধর্মে ব্যতিরেকে আমি সমাজের অস্তিত্ব খোঁজে পাইনা, হয়তো খোঁজে পাওয়া সম্ভব-ও নয়।
একটু পিছনে ফিরি, ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস খুজতে গিয়ে খোঁজে পেলাম একাধিক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর জীবন গল্পের উপাখ্যান। সে ইতিহাসে ত্যাগ এবং মোহিত ভালোবাসার সম্মোহিত গল্প-ও আছে। জীবনের বিনিময়ে ইতিহাসের অংশ হওয়ার বিষয়-ও উল্লেখ আছে। তবু-ও প্রশ্ন দুই জায়গায়
১। অন্যের ভালোবাসার গল্প দিয়ে নিজের জীবনের অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব কি-না?
২। খ্রিস্টান সমাজের সাথে বাঙালী হিন্দু /মুসলমানের ধর্ম এবং সমাজের সূত্র কোথায়?

ভালোবাসা বাঙালি সমাজে মোটে-ও উপেক্ষিত শব্দ নয় তবে প্রেম বরাবর-ই প্রতারিত এবং প্রশ্নবৃদ্ধ শব্দ। তাছাড়া ভালোবাসার জন্য বছরে একদিন নির্ধারণ এ ধোঁকা কার সাথে? নিজের সাথে না নিজের সমান্তরালের জনের সাথে?
এ প্রশ্ন-ও তো উঠার দরকার দিনে এসে রাতের আধারে ম্লান হয়ে যাওয়া প্রেম-ই কি ভালোবাসা?সমাজের নিবেদন-কে পরিহার করে গৌণ বিষয়াবলি সামনে নিয়ে আসলে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সে সত্য আপনি জানেন তো?
তবু-ও বাঙালি সমাজে সংখ্যায় ছোট হলে-ও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যে ঘটা করে ভালোবাসা দিবস নিজেদের ভঙ্গিমায় উদযাপন করে তাদের এই উদযাপনে আমি সত্যের মোহ খুঁজে পাইনা। তাদের এই উদযাপন আমি ক্যাপিটালিস্টিক ভালোবাসা হিসেবে বিবেচনা করি। ক্যাপিটালিজমের মূল লক্ষ্যে যেভাবে মুনাফা সর্বোচ্ছকরণ তেমনিভাবে এ দিবস পালনকারী সংখ্যার সংখ্যাগরিস্টের মূল লক্ষ্য সারা বছরের বিনিয়োগের জৈবিক সুবিধা ভোগ! এতে হয়তো বিনিয়োগকারীর লাভ হয় বটে কিন্ত ব্যবহৃত শ্রেণির উপকার। এখানে ব্যবহৃত শ্রেণী কি পলেতারিয়েত। আমি তো তাদের পলেতারিয়েত মনে করতে পারছিনা। আবার আমার বোঝা কাল মার্কস অনুযায়ী তাদের বুর্জোয়া-ও বলা যাচ্ছেনা। ব্যবহৃত শ্রেণীকে যথাযথ শ্রেণীতে বসাতে পারলামনা, তাই শেষমেশ এ বলেই সমাপ্তি টানি, এখন বুঝলাম আমি কাল মার্কস-ই বুঝলামনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি, সিলেট।

prottoyeevromor

love

valentines

capitalism