কোরিয়ান সিনেমার নায়ক হয়ে সাফল্যের অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিবাসী শ্রমিক মাহবুব আলম পল্লব।
১৯৯৯ সালে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যান মাহবুব। প্রথমদিকে প্রবাসীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করা শুরু করেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন বড়পর্দার সিনেমার অভিনেতা হিসেবে।
নায়ক মাহবুব বলেন, অভিবাসী কর্মী হিসেবে প্রায়ই কমবেশি বৈষম্যের শিকার হতে হয় প্রবাসীদের।
এ কারণে নিজে প্রবাসী হয়েও অন্যদের নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। একটা পর্যায়ে বুঝতে পারেন, নিজেদের জন্য কিছু করা জরুরি।
তাই অদম্য ইচ্ছা ও সাহস নিয়ে তৈরি করতে থাকেন ডকুমেন্টারি। অভিনয় বা চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল না তার। পরিকল্পনা ছিল দুই তিন বছর কোরিয়ায় অবস্থান করে তারপর দেশে ফিরবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। ঘটনাক্রমে যুক্ত হয়ে যান চলচ্চিত্রে।
২০০৪ সাল থেকে ডকুমেন্টারির কাজ শুরু করেন মাহবুব। কারণ কোরীয় মিডিয়া অভিবাসীদের কোনো সুযোগ দিচ্ছিল না। “দ্য রোড অব দ্য রিভেঞ্জ” নামের শর্টফিল্মে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এটি ছিল এক ধরনের ব্ল্যাক কমেডি।
২০০৯ সালে মুক্তি পায় মাহবুব অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “হোয়ার ইজ রনি….”। একই বছরে আসে “বান্ধবী”, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
মাহবুব অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে- “মাই ফ্রেন্ড অ্যান্ড হিজ ওয়াইফ”, “হোয়ার ইজ রনি”, “পেইনড”, “পারফেক্ট প্রপোজাল”, “লাভ ইন কোরিয়া”, “আসুরা: দি সিটি অব ম্যাডনেস” ও “ইউ আর মাই ভাম্পায়ার”।
এখন পর্যন্ত ১৫টির মতো কোরিয়ান নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পুরস্কার নামে খ্যাত সেজং কালচারাল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন মাহবুব।
ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে তার সফলতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও শুরুর গল্পটা এমন ছিল না। মায়ের চিকিৎসার টাকার জন্য রোজগার করার আশায় ২২ বছর বয়সে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি পোশাক কারখানায় অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ শুরু করেন তিনি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ১০ কোটি টাকার বাজেটেও কাজ করেছি, তবে আরও বড় বাজেটের চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই।
দুই বোন ও নয় ভাইয়ের বিশাল সংসারে বাবা এখনো বেঁচে আছেন। কোরিয়ান মেয়ে লি মিয়ংকে ভালোবেসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এই কীর্তিমান বাংলাদেশি মাহবুব আলম পল্লব।