রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অগণিত সৎ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কী ঘুমিয়ে আছেন? কেন তাঁরা মাঠে নামছেন না? দলীয় কর্নধার ও সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দল ও সরকারে শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু করা অভিযানকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে কেন দেশের সকল জেলা, উপজেলায় মিছিল ও শোভাযাত্রা বের করা হচ্ছে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে তাঁদের ভয় কীসের? দুর্নীতির বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানে তো একে সমর্থন করা। কোনো কারণে এ দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যদি বন্ধ হয়ে যায়- তাহলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য বড় ধরনের সুনামী ধেয়ে আসবে।
এশিয়ার লৌহমানবী, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৩ বছরে পা রাখলেও এক মুহুর্ত তাঁর বিশ্রাম নেই। দেশ ও জনগণের সার্বিক উন্নয়নে তিনি নিরলস কাজ করছেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ নেতাদের কারণে শেখ হাসিনার কষ্টার্জিত সুনাম ও ভাবমুর্তি ধুলোয় মিশে যেতে বসেছে। উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাগামাহীন দুর্নীতি। দলের মধ্যে এক শ্রেণির সুবিধাভোগীরা পুঁজি লুণ্ঠনের মহাযজ্ঞে শরিক হয়ে গডফাদার-এ পরিণত হয়েছে। মানবতার মা শেখ হাসিনা এ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার দুঃসাহসই দেখিয়েছেন। শুরু করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধিঅভিযান। চলমান এ ক্র্যাকডাউনকে দুর্বৃত্তরা সহজে মেনে নেবে না। তাই নিজেদের আত্মরক্ষার্থে শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলতে তারা মরণকামড় দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। কিন্তু এ ভয়ে জনগণের স্বার্থে পরিচালিত এ শুদ্ধিঅভিযান থামতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে দেশের কলঙ্কজনক দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের সংস্কৃতি বদলানোর গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন। জাতীয় স্বার্থে তিনি এ মহাচ্যালেঞ্জের ঝুঁকি নিতে এতটুকু চিন্তা করেননি। দুর্নীতিবাজ ও মাফিয়ারা শক্তিশালী হলেও ১৭ কোটি মানুষের দেশে তারা নগণ্য সংখ্যক। দেশের নব্বইভাগ জনগণ চায় এ অভিযান অব্যাহত থাকুক। শেখ হাসিনা নিজেও সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ইস্পাতকঠিন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ৯ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ৯০শতাংশ দুর্নীতি ও অপকর্মের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নন। এসব নেতাকর্মী কেন দুর্নীতিবাজ দলীয় লোকদের দায় নিজেদের ঘাড়ে নেবেন। তাই এ সময়ে তাদের উচিত শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তাতে সক্রিয়ভাবে শরিক ও সোচ্চার হওয়া। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সত্যিকার অনুসারীদের উচিত, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার-পেষ্টুন-প্ল্যাকাড নিয়ে মিছিল-মিটিং করা। দুর্বৃত্তদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার এখনই সোনালী সময়। কালক্রমে রাজনীতিতে যে আবর্জনা তৈরি হয়েছে, তা পরিস্কার করা এ-ই মোক্ষম সময়। কেননা, এ অভিযান যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার মস্তবড় বিপর্যয়ের কবলে পড়বে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেনা শাসক জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ দুই সেনা শাসক দেশে পুঁজিলুণ্ঠন ও দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। রাজনৈতিক এ পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পুরোনো পাকিস্তানী আদলের সামরিক বাহিনী ও সিভিল আমলাতন্ত্র-নিয়ন্ত্রিত নব্য উপনিবেশিক, আমলাতান্ত্রিক ও পুঁজি লুণ্ঠনমূলক রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা। সুযোগসন্ধানী ডান ও বামপন্থী নেতা-পাতিনেতা-কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও সিভিল আমলা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের নানবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সেনা ছাউনিতে বসে জিয়াউর রহমান গড়ে তোলেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেই সময়ে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় দুর্নীতি ও পুঁজিলুণ্ঠন ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে সেনাশাসক এরশাদও একই নীতি অনুসরণ করে রাজনীতির যে বারোটা বাজিয়ে গেছেন তা থেকে জনগণের এখনও পরিত্রাণ মেলছে না।
পরিশেষে, আবারও আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত জনপ্রিয় নেতাকর্মী-যারা দেশকে ভালোবাসেন, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেন তাঁদের প্রতি আকুল আহ্বান, শেখ হাসিনা আপনাদের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে নামার যে ঐতিহাসিক সুযোগ করে দিয়েছেন তা আপনারা কোনোভাবেই হাতছাড়া করবেন না। সুযোগ বারবার আসে না। একযোগে মাঠে নেমে আপনারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম।