কবি রশিদ হারুন
“বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ”
-এই শব্দটা পেলেই আমি ঘরের উত্তরের জানালা খুলে দেই।
প্রতিবারই দেখি একটি লাশ নামানো হচ্ছে কবরে।
উত্তরের জানালার দেওয়াল ছুঁয়েই আমার মহল্লার প্রাচীন কবরস্থান।

আমি প্রায়ই গভীর রাতে গোপনে,
পরিচিত-অপরিচিত মৃত মানুষের নতুন কবরে গিয়ে বসে থাকি কিছুক্ষণ।
কখন যে কবরে কান পাতি-টেরও পাইনা!

আমি আসলে একটি ইতিহাসে কান পাতি,
-একজন মানুষের সারাজীবনের নিজস্ব অদ্বিতীয় সভ্যতার ইতিহাস।
পাওয়া-না পাওয়ার, সুখ-দুঃখের, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আর সম্মান-অসম্মানের ইতিহাস,
সাথে সেই মানুষটির জন্মের আর মৃত্যুর ইতিহাস।
মাঝে মাঝে আমার বুকের ভেতর শো শো শব্দে রাতের নির্জনতা ভেঙে অনুভব করি
-একটি জীবন্ত ‘শিশু কবরের’ উল্লাস।

অদ্ভুত এক ঘোর লাগে তখন,
-খুব জানতে ইচ্ছা করে,
কেমন আছেন সদ্য মারা যাওয়া কবরের মানুষটি?
আশ্চর্য, ভীত না আনন্দিত!
খুব বলতে ইচ্ছে করে,
-‘’আপনার মৃত্যুতে আমি ব্যথিত”
কখনো মনে হয়,
-এই মানুষটি নিজের মৃত্যূতে হয়তো আনন্দ পেয়েও থাকতে পারেন!
তাই শুধুই বলি,
-‘আপনার ইতিহাসের সাথে
আমার ইতিহাসের একদিন দেখা হবেই।’

আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়ালের মতো হেলে-দুলে হাঁটতে হাঁটতে ঘরে ফিরি।
খুঁজে পাই আমার পূর্বপুরুষদের আর বাবা-মার জন্ম-মৃত্যুর ইতিহাসের পাতা,
মনে হয় ওনারা আকাশে হাওয়ায় ভেসে ভেসে গল্প করছেন।

আসলে রাতের আন্ধকারে আমি মৃত মানুষের নতুন কবরে-
আমার ভয় রেখে আসি খুব গোপনে,

  • জীবিত মানুষ হয়ে গোপনে কিছুদিন বেঁচে থাকার স্বার্থপরতার লোভে।
    ————————————
    রশিদ হারুন
    ০২/০৬/২০২০