অনলাইন ডেস্ক : সুবর্ণা খাতুন। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘গ’ ইউনিটের মেধা তালিকায় ৯২৭ নম্বরে এসেছে তার নাম। কিন্তু প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও ভর্তিতে অননিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে দিনমজুর মায়ের এ মেধাবী সন্তানের। এখনো তার পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জোগাতে পারেনি ভর্তির ১৩ হাজার টাকা। কুষ্টিয়া মিলপাড়ার তুলাশ্রমিক মা আরজিনা বেগমের (৪৩) একমাত্র মেয়ে সুবর্ণা খাতুন জন্মের পরের বছরই সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা বাবুল হোসেনকে হারান। এরপর তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় মামার বাড়িতে। দিনে দুইশ টাকার পারিশ্রমিক, আর হোটেলে টুকটাক কাজ করে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন মা আরজিনা। ঢাবিতে চান্স পেয়ে ভর্তিতে অনিশ্চয়তার বিষয়ে সুবর্ণা জানান, মায়ের পক্ষে ভর্তির এতগুলো টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। নিজে টিউশনি করে যা জুগিয়েছিলাম, তা তো ভর্তি পরীক্ষার ফরম আর ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচ মেটাতেই শেষ। মাকে নিয়ে কাল পৌরসভা চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি দরখাস্ত করতে বলেছেন। হয়তো কিছু ম্যানেজ হবে। না হলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজেই পড়ব। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুল আলম জানান, সুবর্না অসম্ভব মেধাবী। কিন্তু মেয়েটার বাবা নেই, খুব দরিদ্রও। আমাকে ওর একজন স্কুল শিক্ষক এ বিষয়ে জানান। আমরা যতটুকু পেরেছি ওকে সাহয্য করেছি। আমার কাছে ইংরেজি পড়ত। ইংরেজিতেও সে খুবই ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আমি ওকে কুষ্টিয়া ইউসিসি কোচিংয়ের একজনের কাছে পাঠায়। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রেজাল্টের পর আমাকে ফোন দিয়েছেল সুবর্না-খুশীর চেয়ে মন খারাপ ছিল বেশি। বললো, স্যার চান্স পেয়ে তো আরও বিপদে পড়লাম। এতো টাকা কোথায় পাব? এমন যখন আর্থিক দুরাবস্থা, তখন কিভাবে এতটা পথ এলেন— জানতে চাইলে সুবর্না বলেন, আম্মু আর আমার ইচ্ছা, এর সঙ্গে শিক্ষকদের সহযোগিতাতেই পেরেছি। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে বইয়ের সৌজন্য কপি চেয়ে নিতাম। পরীক্ষার আগে দুয়েকমাস পড়াতেন বিনা পয়সায়। পরীক্ষায় সবসময় প্রথম না হয় দ্বিতীয় হতাম। তাই শিক্ষকরা খুব স্নেহ করতেন। সহযোগিতা করতেন। এভাবেই এসএসসি আর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। সুবর্না এসএসসি পাস করেন ২০১৬ সালে। তবে সে বছর আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি তার। টাকার অভাবের কারণেই একবছর পড়ালেখা বন্ধ ছিল তার। পরে কিভাবে আবার শুরু করলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সুবর্না বলেন, প্রথমে হতাশ হয়ে পড়ি। দুই-তিন মাস কিছুই ভালো লাগত না। পরে কলেজে ভর্তি হওয়া বান্ধবীদের কাছে খোঁজ নিই, কত টাকা খরচ হয় কলেজের লেখাপড়ায়। এরপর শুরু করি এলাকার ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো। এই টিউশনির টাকা থেকে মাকে কিছুটা সাহায্য করি। আর বাকি টাকা জমাতে থাকি। সেই জমানো টাকা দিয়ে ২০১৭ সালে ভর্তি হই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। দুই বছর পর এইচএসসি পাস করেছেন। ঢাবি বাণিজ্য অনুষদে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাতেও স্থান পেয়েছেন মেধাতালিকায়। কিন্তু দুই বছর আগের অনিশ্চয়তা যেন আবার জেঁকে ধরেছে সুবর্নাকে। ঢাবি’তে ভর্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলেও যে আর্থিক সক্ষমতায় এখনো পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে! আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সুর্বনা বলেন, একটাতে ফরম তুলে পরীক্ষা দিতেই তো সব টাকা শেষ। অন্য কোথাও ফরম তোলার টাকাই ছিল না। সুর্বনা বলেন, আগামী ২৭ অক্টোব থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু ঢাকায় আমাদের পরিচিত বা আত্মীয় কেউ নেই। আম্মু তাই যেতে দিতে চাচ্ছেন না। আবার ভর্তি যে হবো, সেই টাকাও নেই। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে। কিন্তু আমি পড়বই— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারি, কুষ্টিয়ার কলেজে পড়ব। টিউশনি করে হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাব।

বাংলাপোস্ট২৪/জামিল